রোগ আল্লাহর নিয়ামত!!
রোগ আল্লাহর নিয়ামত!!
লেখকঃ আজিজুল হাকিমমহান আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সুস্হ রাখেন এবং তিনিই আমাদেরকে রোগাক্রান্ত করেন আবার তিনিই আমাদেরকে সুস্থ করে তোলেন।
কারো রোগ হলে তাকে দেখতে যাওয়া, তার সেবা করা ইসলামের নির্দেশ। স্বয়ং আল্লাহর নবী সাঃ রোগীর সেবা করেছেন। রোগীকে দেখে ঘৃণা করা যাবে না, তার সাথে খারাপ আচরণ করা যাবে না, তাকে অপায়া ভাবা যাবে না। তার যত বড় রোগই হোক না কেন, তাকে শান্তনা দিতে হবে। তাকে বুঝাতে হবে আল্লাহ হয়তো তোমাকে রোগে ফেলে পরিক্ষা করছেন তাই সবুর কর। হতাশ হয়োনা। সুস্হতা যেমন আল্লাহর নিয়ামত অসুস্হতাও তেমনি আল্লাহর নিয়ামত। এব্যাপারে পবিত্র কুরআন এবং হাদীস থেকে আপনাদের খেদমতে পেশ করছি।
মহান আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছেন দেখ, মনে কর যে, আমি যখন রোগাক্রান্ত হই তখন তিনিই আমাকে সুস্হতা দান করেন।
وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ
(আশ শুআরা - ৮০)
যখন আমি রোগাক্রান্ত হই, তখন তিনিই আরোগ্য দান করেন।
وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ ۙ وَلَا يَزِيدُ الظَّالِمِينَ إِلَّا خَسَارًا
(বনী-ইসরাঈল - ৮২)
আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত। গোনাহগারদের তো এতে শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়।
রোগের দ্বারা গোনাহ মাফ হয়ঃ
আবু সাঈদ খুদরী ও আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মুসলিম বান্দার উপর রোগ-শোক, দুঃখ-কষ্ট, দুর্ভাবনা যাই আসুক, এমনকি যে কাঁটা তার গায়ে বিধে তার বিনিময়ে আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করেন (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ)।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ঈমানদার পুরুষ ও নারীর জান-মাল ও পরিবার-পরিজনের উপর বালা-মুসীবত লেগেই থাকে। অতঃপর সে মহামহিম আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাত করে যে, তার কোন গুনাহই অবশিষ্ট থাকে না (তিরমিযী, আহমাদ)।
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মুমিন ব্যক্তি রোগাক্রান্ত হলে আল্লাহ তাকে (গুনাহ থেকে) এমনভাবে পরিচ্ছন্ন করেন, যেমন হাঁপড় লোহাকে পরিচ্ছন্ন করে।
রোগাক্রান্ত ব্যক্তি ইবাদতের সাওয়াব লাভ করেঃ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোন ব্যক্তি রোগাক্রান্ত হলে সেই অবস্থায় সে তার সুস্থাবস্থায় যেরূপ আমল করতো সেরূপ সওয়াব তার জন্য লেখা হয়। (আহমাদ, বাযযার, হাকিম)
রোগীকে দেখতে যাওয়া মুসলমানের হকঃ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তিনটি বিষয়, তার প্রতিটিই প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অবশ্য করণীয়। রুগ্নকে দেখতে যাওয়া, জানাযায় অংশগ্রহণ করা এবং যে ব্যক্তি হাঁচি দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করে তার জবাব দেয়া (ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা) (ইবনে হিব্বান)।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ (হাশরের মাঠে) বলবেন, আমি তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে আহার করাওনি। বান্দা বলবে, হে প্রভু! তুমি কিভাবে আমার নিকট খাদ্য চেয়েছিলে, আর আমি তোমাকে আহার করাইনি! অথচ তুমিই তো বিশ্বজাহানের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার নিকট খাদ্য চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে আহার করাওনি। তুমি কি জানতে না, যদি তুমি তাকে আহার করাতে তবে তা আমার নিকট পেতে? আদম সন্তান! আমি তোমার নিকট পিপাসার্ত হয়ে পানি চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে পানি পান করাওনি। বান্দা বলবে, হে প্ৰভু! কেমন করে আমি তোমাকে পানি পান করাতাম, অথচ তুমি বিশ্বজাহানের প্রতিপালক! আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে পানি পান করাওনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে পানি পান করাতে, তবে তা আমার নিকট পেতে? আদম সন্তান! আমি রোগাক্রান্ত হয়েছিলাম, তুমি আমার সেবা করোনি। বান্দা বলবে, হে প্ৰভু! আমি কিভাবে তোমার সেবা করতে পারি, তুমি বিশ্বজাহানের প্রতিপালক। তিনি বলবেন, তুমি কি জানতে না, আমার অমুক বান্দা রোগাক্রান্ত হয়েছিল? তুমি যদি তার সেবা করতে, তবে তা আমার নিকট পেতে অথবা তুমি তার কাছেই আমাকে পেতে। (মুসলিম, মুসনাদ আবু আওয়া নাসাঈ)
No comments