Header Ads

 আস্সালামু আলাইকু,ওয়া রাহমাতুল্লা। প্রিয় বন্ধু "মাসিক আল-আকসা" পত্রিকাটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। নিয়মিত ভিজিট করুন, মাসিক আল-আকসার সাথে থাকুন। ধন্যবাদ

Breaking News

সালামের গুরুত্ব ও ফযিলত

সালামের গুরুত্ব ও ফযিলতঃ

লেখকঃ আজিজুল হাকিম


মানব জাতি হচ্ছে আল্লাহ তাআলার শ্রেষ্ঠ জাতি। তাদের কাজ কারবারও শ্রেষ্ঠ হবে এটাই স্বাভাবিক। তাদের চলা, ফেরা, উঠা, বসা, খাওয়া, দাওয়া, মুয়ামালাত, মুয়াশারাত সবকিছুই হবে মহান আল্লাহ তাআলার হুকুম এবং রাসূল সাঃ এর সূন্নাত অনুযায়ী। পবিত্র কুরআন এবং হাদীস থেকে আমরা আজ সালামের গুরুত্ব ও ফযিলত সম্পর্কে আলোচনা করবো, ইনশাআল্লাহ।

সালাম শব্দের অর্থঃ


"সালাম" শব্দটি মহান আল্লাহ তাআলার একটি গুণবাচক নাম। যার অর্থ হচ্ছে, নিরাপত্তা-দানকারী, শান্তি-দানকারী।
আমরা যখন কাউকে সালাম দেই তখন বলি, "আস্সালামু আলাইকুম"
অর্থ, আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।
সালাম প্রদান করা সূন্নাত এবং তার জবাব দেয়া ওয়াজিব। সালামের জবাব না দিলে গোনাহে কবীরা হবে।

সালামের গুরুত্বঃ

পবিত্র কুরআন থেকেঃ

মহান আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَدْخُلُواْ بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّىٰ تَسْتَأْنِسُواْ وَتُسَلِّمُواْ عَلَىٰٓ أَهْلِهَا ﴾ [النور: ٢٧]

অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারও গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে ও তাদেরকে সালাম না দিয়ে প্রবেশ করো না।” (সূরা নূর ২৭ আয়াত)

তিনি অন্যত্র বলেন,

﴿ فَإِذَا دَخَلۡتُم بُيُوتٗا فَسَلِّمُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِكُمۡ تَحِيَّةٗ مِّنۡ عِندِ ٱللَّهِ مُبَٰرَكَةٗ طَيِّبَةٗۚ ﴾ [النور: ٦١]

অর্থাৎ “যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে, তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এ হবে আল্লাহর নিকট হতে কল্যাণময় ও পবিত্র অভিবাদন।” (সূরা নূর ৬১ আয়াত)

তিনি অন্য জায়গায় বলেন,

﴿ وَإِذَا حُيِّيتُم بِتَحِيَّةٖ فَحَيُّواْ بِأَحۡسَنَ مِنۡهَآ أَوۡ رُدُّوهَآۗ ﴾ [النساء: ٨٦]

অর্থাৎ “যখন তোমাদেরকে অভিবাদন করা হয় (সালাম দেওয়া হয়), তখন তোমরাও তা অপেক্ষা উত্তম অভিবাদন কর অথবা ওরই অনুরূপ কর।” (সূরা নিসা ৮৬ আয়াত)

তিনি আরো বলেছেন,

﴿ هَلۡ أَتَىٰكَ حَدِيثُ ضَيۡفِ إِبۡرَٰهِيمَ ٱلۡمُكۡرَمِينَ ٢٤ إِذۡ دَخَلُواْ عَلَيۡهِ فَقَالُواْ سَلَٰمٗاۖ قَالَ سَلَٰمٞ ﴾ [الذاريات: ٢٤، ٢٥]

অর্থাৎ “তোমার নিকট ইব্রাহীমের সম্মানিত মেহমানদের বৃত্তান্ত এসেছে কি? যখন তারা তার নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, ‘সালাম।’ উত্তরে সে বলল, ‘সালাম।’” (সূরা যারিয়াত ২৪-২৫ আয়াত)

পবিত্র হাদীস থেকেঃ

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল, ‘সর্বোত্তম ইসলামী কাজ কী?’ তিনি বললেন, “(ক্ষুধার্তকে) অন্নদান করবে এবং পরিচিত-অপরিচিত নির্বিশেষে সকলকে (ব্যাপকভাবে) সালাম পেশ করবে।’’

সহীহুল বুখারী ১২, ২৮, ৬২৩৬, মুসলিম ৩৯, তিরমিযী ১৮৫৫, নাসায়ী ৫০০০, আবূ দাউদ ৫১৯৪, ইবনু মাজাহ ৩২৫৩, ৩৬৯৪, আহমাদ ৬৫৪৫, ৬৮০৯, দারেমী ২০৮১

আবূ উমারা বারা ইবনে আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সাতটি (কর্ম করতে) আদেশ করেছেনঃ (১) রোগী দেখতে যাওয়া, (২) জানাযার অনুসরণ করা, (৩) হাঁচির জবাব দেওয়া, (৪) দুর্বলকে সাহায্য করা, (৫) নির্যাতিত ব্যক্তির সাহায্য করা, (৬) সালাম প্রচার করা, এবং (৭) শপথকারীর শপথ পুরা করা।’

সহীহুল বুখারী ১২৩৯, ২৪৪৫, ৫১৭৫, ৫৬৩৫, ৫৬৬০, ৫৮৩৮, ৫৮৪৯, ৫৮৬৩, ৬২২২, ৬২৩৫, ৬৬৫৪, মুসলিম ২০৬৬, তিরমিযী ১৭৬০, ২৮০৯, নাসায়ী ১৯৩৯, ৩৭৭৮, ৫৩০৯, ইবনু মাজাহ ২১১৫ আহমাদ ১৮০৩৪, ১৮০৬১, ১৮১৭০

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর যতক্ষণ না তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসা গড়ে উঠবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি কাজ বলে দেব না, যা করলে তোমরা একে অপরকে ভালবাসতে লাগবে? (তা হচ্ছে) তোমরা নিজেদের মধ্যে সালাম প্রচার কর।’’

মুসলিম ৫৪, তিরমিযী ২৬৮৮, আবূ দাউদ ৫১৯৩, ইবনু মাজাহ ৬৮, ৩৬৯২, আহমাদ ৮৮৪১, ৯৪১৬, ৯৮২১, ১০২৭২, ২৭৩১৪

প্রথমে সালাম প্রদানকারীর মর্যাদাঃ

আবূ উমামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহর সর্বাধিক নিকটবর্তী মানুষ সেই, যে প্রথমে সালাম করে।’’

আবূ দাউদ ৫১৯৭, তিরমিযী ২৬৯৪, আহমাদ ২১৬৮৮, ২১৭৭৬, ২১৮১৪

হযরত আব্দুল্লাহ রাঃ হইতে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম সাঃ এরশাদ করিয়াছেন, যে ব্যক্তি আগে সালাম করে সে অহংকার হইতে মুক্ত। 

শুয়াবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৮৪০৭

সালাম প্রদানকারীর ফযিলতঃ

ইমরান ইবনে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একটি লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে এভাবে সালাম করল ‘আসসালামু আলাইকুম’ আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জবাব দিলেন। অতঃপর লোকটি বসে গেলে তিনি বললেন, ‘‘ওর জন্য দশটি নেকী।’’ তারপর দ্বিতীয় ব্যক্তি এসে ‘আসসালামু আলাইকুম অরহমাতুল্লাহ’ বলে সালাম পেশ করল।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের উত্তর দিলেন এবং লোকটি বসলে তিনি বললেন, ‘‘ওর জন্য বিশটি নেকী।’’ তারপর আর একজন এসে ‘আসসালামু আলাইকুম অরাহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহ’ বলে সালাম দিল। তিনি তার জবাব দিলেন। অতঃপর সে বসলে তিনি বললেন, ‘‘ওর জন্য ত্রিশটি নেকী।’’

তিরমিযী ২৬৮৯, আবূ দাউদ ৫১৯৫, আহমাদ ১৯৪৪৬, দারেমী ২৬৪০

আবূ ইউসুফ আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘হে লোক সকল! তোমরা সালাম প্রচার কর, (ক্ষুধার্তকে) অন্নদান কর, আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখ এবং লোকে যখন (রাতে) ঘুমিয়ে থাকে, তখন তোমরা নামায পড়। তাহলে তোমরা নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’’

তিরমিযী ২৪৮৫, ইবনু মাজাহ ১৩৩৪, ৩২৫১, দারেমী ১৪৬০

সালামের প্রদানের আদবঃ

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আরোহী পায়ে হাঁটা ব্যক্তিকে, পায়ে হাঁটা ব্যক্তি বসে থাকা ব্যক্তিকে এবং অল্প সংখ্যক লোক অধিক সংখ্যক লোককে সালাম দেবে।’’

সহীহুল বুখারী ৬২৩১, ৬২৩২, ৬২৩৪, ৩১, ৩২, ৩৪, মুসলিম ২১৬০, তিরমিযী ২৭০৩, আবূ দাউদ ৫১৯৮, আহমাদ ২৭৩৭৯, ৮১১৩, ১০২৪৬

ছোট বাচ্চাদেরকে সালাম প্রদানঃ

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি কতিপয় শিশুর নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় তাদেরকে সালাম দিলেন এবং বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করতেন।’

সহীহুল বুখারী ৬২৪৭, মুসলিম ২১৬৮, তিরমিযী ২৬৯৬, আবূ দাউদ ৫২০২, ইবনু মাজাহ ৩৭০০, আহমাদ ১১৯২৮, ১২৩১৩, ১২৪৮৫, ১২৬১০, দারেমী ২৬৩৬

অন্যের গৃহে প্রবেশের সময় সালাম প্রদান করাঃ

রিবয়ী ইবনে হিরাশ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন বনু ‘আমেরের একটা লোক আমাকে হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, সে একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট (প্রবেশ) অনুমতি চাইল। তখন তিনি বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন। সুতরাং সে নিবেদন করল, ‘আমি কি প্রবেশ করব?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় খাদেমকে বললেন, ‘বাইরে গিয়ে এই লোকটিকে অনুমতি গ্রহণের পদ্ধতি শিখিয়ে দাও এবং তাকে বল, তুমি বল ‘আসসালামু আলাইকুম, আমি কি প্রবেশ করব?’ সুতরাং লোকটা ঐ কথা শুনতে পেয়ে বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম, আমি কি প্রবেশ করব?’ অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দিলেন এবং সে প্রবেশ করল।

আবূ দাউদ ৫১৭৭, আহমাদ ২২৬১৭

নিজ গৃহে প্রবেশের সময় সালাম প্রদান করাঃ

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হে বৎস! তোমার বাড়িতে যখন তুমি প্রবেশ করবে, তখন সালাম দাও, তাহলে তোমার ও তোমার পরিবারের জন্য তা বরকতময় হবে।’’

তিরমিযী ২৬৯৮

পুরুষ কর্তৃক মহিলাদেরকে সালাম প্রদান করাঃ

যদি কোন ফেতনার আশংকা না থাকে তবে, পুরুষ মহিলাকে সালাম প্রদান করতে পারবে। আর যদি কোন ফেতনা সংগঠিত হওয়ার প্রবল আশংকা থাকে তাহলে মহিলাকে সালাম প্রদান করা জায়েজ হবে না।

আসমা বিনতে ইয়াযীদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাদের) একদল মহিলার নিকট অতিক্রম করার সময় আমাদেরকে সালাম দিলেন।’

আবূ দাউদ ৫২০৪, দারেমী ২৬৩৭, তিরমিযী ২৬৯৭, ইবনু মাজাহ ৩৭০১, আহমাদ ২৭০১৪

অমুসলিমকে সালাম না করাঃ

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানদেরকে প্রথমে সালাম দিয়ো না। যখন পথিমধ্যে তাদের কারো সাথে সাক্ষাৎ হবে, তখন তাকে পথের এক প্রান্ত দিয়ে যেতে বাধ্য করো।’’

মুসলিম ২১৬৭, তিরমিযী ২৭০০, আবূ দাউদ ১৪৯, আহমাদ ৭৫১৩,৭৫৬২,৮৩৫৬,৯৪৩৩,৯৬০৩,
১০৪৪১৮

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কিতাবধারীরা (ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানরা) যখন তোমাদেরকে সালাম দেয়, তখন তোমরা জবাবে বল, ‘ওয়া আলাইকুম।’’

সহীহুল বুখারী ৬২৫৮, ৬৯২৬, মুসলিম ২১৬৩, তিরমিযী ৩৩০১, আবূ দাউদ ৫২০৭, ইবনু মাজাহ ৩৬৯৭, আহমাদ ১১৫৩৭,১১৭০৫,১১৭৩১,১২০১৯, ১২৫৮, ১২৫৮৩, ১২৬৭৪, ১৩৩৪৫

মহান আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন 

No comments