মানুষের প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করা জঘন্যতম গোনাহ।
মানুষের প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করা জঘন্যতম গোনাহ।
লেখকঃ আজিজুল হাকিমবিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
وَمَنۡ یَّکۡسِبۡ خَطِیۡٓىـَٔۃً اَوۡ اِثۡمًا ثُمَّ یَرۡمِ بِہٖ بَرِیۡٓــًٔا فَقَدِ احۡتَمَلَ بُہۡتَانًا وَّاِثۡمًا مُّبِیۡنًا
(আন নিসা-১১২)
যে ব্যক্তি ভূল কিংবা গোনাহ করে, অতঃপর কোন নিরপরাধের উপর অপবাদ আরোপ করে সে নিজের মাথায় বহন করে জঘন্য মিথ্যা ও প্রকাশ্য গোনাহ।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে তোমরা বিরত থাকবে। সহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেগুলো কী? তিনি বললেন, (১) আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা (২) যাদু (৩) আল্লাহ্ তা‘আলা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, শরীয়ত সম্মত কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করা (৪) সুদ খাওয়া (৫) ইয়াতীমের মাল গ্রাস করা (৬) রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং (৭) সরল স্বভাবা সতী-সাধ্বী মু’মিনাদের অপবাদ দেয়া।
মুসলিম ১/৩৮ হাঃ ৮৯, বুখারী ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫৭৫
যুগে যুগে এক শ্রেণীর মানুষ আল্লাহর পথের পথিকদেরকে বিভিন্নভাবে কষ্ট দিয়ে আসছে। কখনো শারীরিক নির্যাতন করে, মানুষিক নির্যাতন করে, কখনোবা মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে। তাদের এমন আক্রমণ থেকে নবী, রাসূল, সাহাবীসহ আলেম উলামা কেহই রক্ষা পায়নি। এ অপকর্মের দ্বারা তারা যে কত বড় গোনাহের ভাগী হয়, তা তারা কখনোই উপলব্ধি করতে পারে না।
মহান আল্লাহ তাআলা এদের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনুল কারীমে কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেনঃ
اِنَّ الَّذِیۡنَ یَرۡمُوۡنَ الۡمُحۡصَنٰتِ الۡغٰفِلٰتِ الۡمُؤۡمِنٰتِ لُعِنُوۡا فِی الدُّنۡیَا وَالۡاٰخِرَۃِ ۪ وَلَہُمۡ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ ۙ
(আন নূর-২৩)
যারা সাধ্বী, সরলমনা ও ঈমানদার নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্যে আছে মহাশাস্তি।
وَاَلۡقَوۡا اِلَی اللّٰہِ یَوۡمَئِذِۣ السَّلَمَ وَضَلَّ عَنۡہُمۡ مَّا کَانُوۡا یَفۡتَرُوۡنَ
(আন নাহল-৮৭)
সেদিন তারা আল্লাহর সামনে আত্নসমর্পন করবে এবং তারা যে মিথ্যা অপবাদ দিত তা বিস্মৃত হবে।
اِنَّ الَّذِیۡنَ جَآءُوۡ بِالۡاِفۡکِ عُصۡبَۃٌ مِّنۡکُمۡ ؕ لَا تَحۡسَبُوۡہُ شَرًّا لَّکُمۡ ؕ بَلۡ ہُوَ خَیۡرٌ لَّکُمۡ ؕ لِکُلِّ امۡرِیًٴ مِّنۡہُمۡ مَّا اکۡتَسَبَ مِنَ الۡاِثۡمِ ۚ وَالَّذِیۡ تَوَلّٰی کِبۡرَہٗ مِنۡہُمۡ لَہٗ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ
(আন নূর-১১)
নিশ্চয়ই যারা এই মিথ্যা অপবাদ রচনা করে এনেছে তারা তােমাদেরই মধ্যকার একটি দল। তােমরা একে তােমাদের জন্য অনিষ্টকর মনে করাে না; বরং এটা তােমাদের জন্য কল্যাণকর। তাদের প্রত্যেকের ভাগে রয়েছে নিজ কৃতকর্মের গুনাহ। তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এর (অর্থাৎ এ অপবাদের) ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা নিয়েছে, তার জন্য আছে কঠিন শাস্তি।
وَالَّذِیۡنَ یُؤۡذُوۡنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَالۡمُؤۡمِنٰتِ بِغَیۡرِ مَا اکۡتَسَبُوۡا فَقَدِ احۡتَمَلُوۡا بُہۡتَانًا وَّاِثۡمًا مُّبِیۡنًا
(আল আহ্যাব-৫৮)
যারা মুমিন নর ও মুমিন নারীদেরকে বিনা অপরাধে কষ্ট দান করে, তারা অপবাদ ও স্পষ্ট পাপের বােঝা বহন করে।
কারো প্রতি অপবাদ আরোপ করতে হলে চারজন চাক্ষুষ শাক্ষী উপস্হিত করতে হবেঃ
لَوۡلَا جَآءُوۡ عَلَیۡہِ بِاَرۡبَعَۃِ شُہَدَآءَ ۚ فَاِذۡ لَمۡ یَاۡتُوۡا بِالشُّہَدَآءِ فَاُولٰٓئِکَ عِنۡدَ اللّٰہِ ہُمُ الۡکٰذِبُوۡنَ
(আন নূর-১৩)
তারা (অর্থাৎ অপবাদদাতাগণ) এ বিষয়ে কেন চারজন সাক্ষী উপস্থিত করল না? সুতরাং তারা যখন সাক্ষী উপস্থিত করল না, তখন আল্লাহর নিকট তারাই মিথ্যুক।
অপবাদ আরোপকারীরা চারজন শাক্ষী উপস্হিত না করা পর্যন্ত নিজেদের লোক সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করতে হবেঃ
لَوۡلَاۤ اِذۡ سَمِعۡتُمُوۡہُ ظَنَّ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ وَالۡمُؤۡمِنٰتُ بِاَنۡفُسِہِمۡ خَیۡرًا ۙ وَّقَالُوۡا ہٰذَاۤ اِفۡکٌ مُّبِیۡنٌ
(আন নূর-১২)
তোমরা যখন একথা শুনলে, তখন ঈমানদার পুরুষ ও নারীগণ কেন নিজেদের লোক সম্পর্কে উত্তম ধারণা করনি এবং বলনি যে, এটা তো নির্জলা অপবাদ?
وَلَوۡلَاۤ اِذۡ سَمِعۡتُمُوۡہُ قُلۡتُمۡ مَّا یَکُوۡنُ لَنَاۤ اَنۡ نَّتَکَلَّمَ بِہٰذَا ٭ۖ سُبۡحٰنَکَ ہٰذَا بُہۡتَانٌ عَظِیۡمٌ
(আন নূর-১৬)
তােমরা যখন একথা শুনেছিলে তখনই , কেন বলে দিলে না ‘একথা মুখে আনার কোন অধিকার আমাদের নেই; হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র। এটা তাে মারাত্মক অপবাদ।
অপবাদ আরোপকারীর দুনিয়াবি শাস্তিঃ
وَالَّذِیۡنَ یَرۡمُوۡنَ الۡمُحۡصَنٰتِ ثُمَّ لَمۡ یَاۡتُوۡا بِاَرۡبَعَۃِ شُہَدَآءَ فَاجۡلِدُوۡہُمۡ ثَمٰنِیۡنَ جَلۡدَۃً وَّلَا تَقۡبَلُوۡا لَہُمۡ شَہَادَۃً اَبَدًا ۚ وَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡفٰسِقُوۡنَ ۙ
(আন নূর-৪)
যারা সতী-সাধ্বী নারীকে অপবাদ দেয়, তারপর চারজন সাক্ষী উপস্থিত করে না। তাদেরকে আশিটি চাবুক মারবে এবং তাদের সাক্ষ্য কখনও গ্রহণ করবে না। তারা নিজেরাই তাে ফাসেক।
No comments