রমজানে রোযা রাখার বিধান।
রমজানে রোযা রাখার বিধান।
লেখকঃ আজিজুল হাকিম
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
রমজান শব্দটি "রমদুন" ধাতু থেকে নির্গত যার অর্থ হচ্ছে, জ্বালানো, পোড়ানো, ভস্ম করে ফেলা।
অর্থাৎ রমজান মাসে যে ব্যক্তি সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোযা রাখে তাহলে সেই রোযা তার সমস্ত গোনাহগুলোকে জ্বালিয়ে, পুড়িয়ে ভস্ম করে ফেলে।
সিয়াম শব্দের আভিধানিক অর্থঃ
এর আভিধানিক অর্থ হলো সাধারণভাবে বিরত থাকা। অর্থাৎ- সহবাস, খাওয়া ও পান করা থেকে বিরত থাকা।
পারিভাষিক অর্থঃ
সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার এবং স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকাকে সাওম বা রোযা বলে।
রমজানের চাঁদ দেখাঃ
‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা চাঁদ না দেখা পর্যন্ত সওম (রোযা) পালন করবে না এবং তা না দেখা পর্যন্ত সওম শেষ (ভঙ্গ) করবে না। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় তোমরা যদি চাঁদ না দেখতে পাও তাহলে (শা‘বান) মাস ত্রিশ দিন পূর্ণ করো।
সহীহ : বুখারী ১৯০৬, মুসলিম ১০৮০, নাসায়ী ২১২১, মালিক ১০০২, আহমাদ ৫২৯৪, দারিমী ১৭২৬, দারাকুত্বনী ২১৬৭, সুনানুল কুবরা লিল বাযহাক্বী ৭৯২২, ইবনু হিববান ৩৪৪৫, ইরওয়া ৯০৩, সহীহ আল জামি‘ ৭৩৫২।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সওম পালন করো চাঁদ দেখে এবং ছাড়ো (ভঙ্গ করো) চাঁদ দেখে। যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে শা‘বান মাসের ত্রিশ দিন পূর্ণ করো।
সহীহ : বুখারী ১৯০৯, মুসলিম ১০৮১, তিরমিযী ৬৮৪, নাসায়ী ২১১৭, ২১১৮, আহমাদ ৯৫৫৬, ৯৩৭৬, ৯৮৫৩, ৯৮৮৫, ১০০৬০, দারিমী ১৭২৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৯৩৩, ৭৯৩২, ইবনু হিব্বান ৩৪৪২, ইরওয়া ৯০২, সহীহ আল জামি‘ ৩৮১০।
নতুন চাঁদ দেখে পড়ার দুআঃ
মুহাম্মদ ইবন বাশশার (রহঃ) হযরত তালহা ইবনে ওবায়দুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নতুন চাঁদ দেখতেন তখন এই দুয়া পড়তেন।
اَللّٰهُمَّ اَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْاَمْنِ وَالْاِيْمَانِ وَالسَّلَامَةِ وَالْاِسْلَامِ رَبِّيْ وَرَبُّكَ اللّٰهُ .
হে আল্লাহ, এই চাঁদকে আমাদের উপর বরকত, ইমান, শান্তি ও ইসলামের সহিত উদিত করুন, হে চাঁদ, আমার ও তোমার রব আল্লাহ তা’আলা।
(সুনান তিরমিজি, হাদীস নং-৩৪৫১, মুসতাদরাকে হাকিম, ৪ : ২৮৫)
সাহরী খাওয়ার ফযিলতঃ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ‘সাহরী’ খাও। সাহরীতে অবশ্যই বারাকাত আছে।
সহীহ : বুখারী ১৯২৩, মুসলিম ১০৯৫, তিরমিযী ৭০৮, নাসায়ী ২১৪৬, ইবনু মাজাহ ১৬৯২, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক ৭৫৯৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৮৯১৩, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৯৩৭, আহমাদ ১১৯৫০, দারিমী ১৭৩৮, সহীহ আত্ তারগীব ১০৬৩।
‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাদের ও আহলে কিতাবদের (ইয়াহূদী ও খৃষ্টান) সওমের মধ্যে পার্থক্য হলো সাহরীর।
সহীহ : মুসলিম ১০৯৬, আবূ দাঊদ ২৩৪৩, তিরমিযী ৭০৯, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক ৭৬০২, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৮৯১৫, আহমাদ ১৭৭৬২, ১৭৭৭১, ১৭৮০১, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৯৪০, ইবনু হিববান ৩৪৭৭, দারিমী ১৭৩৯, আল আওসার লিত্ব ত্ববারানী ৩২০৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮১১৫, সহীহ আত্ তারগীব ১০৬৪, সহীহ আল জামি‘ ৪২০৭, নাসায়ী ২১৬৬।
‘ইরবায ইবনু সারিয়াহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদিন) আমাকে রমাযানের সাহরী খেতে ডাকলেন এবং বললেন, বারাকাতপূর্ণ খাবার খেতে এসো।
সহীহ : আবূ দাঊদ ২৩৪৪, নাসায়ী ২১৬৫, সহীহাহ্ ২৯৮৩, সহীহ আল জামি‘ ৭০৪৩।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিনের জন্য সাহরীর উত্তম খাবার হলো খেজুর।
সহীহ : আবূ দাঊদ ২৩৪৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮১১৭, ইবনু হিব্বান ৩৪৭৫, সহীহাহ্ ৫৬২, সহীহ আত্ তারগীব ১০৭২।
ইফতারের ফযিলতঃ
সাহল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যতদিন পর্যন্ত মানুষ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে।
সহীহ : বুখারী ১৯৫৭, মুসলিম ১০৯৮, তিরমিযী ৬৯৯, মুয়াত্ত্বা মালিক ১০১১, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক ৭৫৯২, ইবনু মাজাহ ১৬৯৭, আহমাদ ২২৮০৪, দারিমী ১৭৪১, ইবনু খুযায়মাহ্ ২০৫৯, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৫৭১৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮১১৮, শু‘আবূল ঈমান ৩৬৩০, ইবনু হিববান ৩৫০২, ইরওয়া ৯১৭, সহীহাহ্ ২০৮১, সহীহ আত্ তারগীব ১০৭৩, সহীহ আল জামি‘ ৭৬৯৪।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দীন সর্বদাই বিজয়ী থাকবে (ততদিন), যতদিন মানুষ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে। কারণ ইয়াহূদী ও খৃষ্টানরা ইফতার করতে বিলম্ব করে।
হাসান : আবূ দাঊদ ২৩৫৩, ইবনু মাজাহ ১৬৯৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৮৯৪৪, ইবনু খুযায়মাহ্ ২০৬০, ইবনু হিব্বান ৩৫০৩, শু‘আবূল ঈমান ৩৯১৬, আহমাদ ৯৮১০, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৫৭৩, সহীহ আত্ তারগীব ১০৭৫, সহীহ আল জামি‘ ৭৬৮৯।
ইফতারের দুআঃ
মু‘আয ইবনু যুহরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইফতার করার সময় (এ দু‘আ) বলতেনঃ اَللّٰهُمَّ لَكَ صَمْتُ
وَعَلٰى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ
অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তোমার জন্য সওম রেখে, তোমার [দান] রিযক দিয়ে ইফতবার করছি।
আবূ দাঊদ ২৩৫৮, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৫০০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮১৩৪, আল জামি‘ ৪৩৪৯, ইরওয়া ৯১৯।
ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইফতার করার পর বলতেন, ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَآءَ اللهُ
পিপাসা চলে গেছে, (শরীরের) রগগুলো সতেজ হয়েছে। আল্লাহর মর্জি হলে সাওয়াব প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে।
আবূ দাঊদ ২৩৫৭, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৫৩৬, ইরওয়া ৯২০, সহীহ আল জামি‘ ৪৬৭৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮১৩৩।
যা দিয়ে ইফতার করতে হয়ঃ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সলাতের আগে কিছু তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি তাজা খেজুর না পেতেন, শুকনা খেজুর দিয়ে করতেন। যদি শুকনা খেজুরও না পেতেন, কয়েক চুমুক পানি পান করে নিতেন।
আবূ দাঊদ ২৩৫৬, তিরমিযী ৬৯৬, আহমাদ ১২৬৭৬, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৫৭৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮১৩১, শু‘আবূল ঈমান ৩৬১৭, ইরওয়া ৯২২, সহীহ আত্ তারগীব ১০৭৭, সহীহ আল জামি‘ ৪৯৯৫।
রমজানের রোযা না রাখার গোনাহঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন শার‘ঈ কারণ কিংবা কোন রোগ ছাড়া রমাযানের কোনদিন ইচ্ছা করে সওম পালন না করে, তাহলে সারা জীবন সওম রেখেও তার কাযা আদায় হবে না।
আবূ দাঊদ ২৩৯৬, তিরমিযী ৭২৩, ইবনু মাজাহ ১৬৭২, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক্ব ৭৪৭৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৯৭৮৪, আহমাদ ১০০৮০, দারিমী ১৭৫৬, আল জামি‘ ৫৪৬২।
No comments